বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ ইলিশের বাড়ীখ্যাত চাঁদপুরে ভরা মৌসুমেও ইলিশের চড়া মূল্যে হতাশ স্থানীয়রা। দেশের অন্যতম বড় মাছ বাজার ‘চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাট’ এখন দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশে সয়লাব। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে হাক-ডাক। রুপালি ইলিশে ভরপুর থাকে এ ঘাট।
সাগরে বিপুল পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ায় প্রতিদিনই দক্ষিণাঞ্চলের ২৫/৩০ ট্রলার এ ঘাটে মাছ নিয়ে আসে। চাঁদপুরের জেলেরা ইলিশের নাগাল না পেলেও দক্ষিণের সাগর মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়া ইলিশের আমদানিতে জমজমাট এই বাজার। এই ঘাটে প্রতিদিন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মণ ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান আড়তদাররা।
ব্যাপক আমদানির পরেও সিন্ডিকেটের কারণে ইলিশের দাম চড়া। এতে করে ক্রেতা সাধারণের মাঝে দেখা দিয়েছে অসন্তুষ্টি। মাছঘাটে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ও অবৈধভাবে ভারতে ইলিশ পাচার করার কারণে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম কমছে না বলে মনে করছেন ক্রেতারা। ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুরে ইলিশের প্রচুর আমদানিতে দিন-রাত সরগরম বড়স্টেশন মাছঘাট। সাগর মোহনা ও নোয়াখালী, হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর, আলেকজান্ডারসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হাজার হাজার মণ ইলিশ আসছে চাঁদপুর মাছঘাটে।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে নদী পথে ফিশিং বোট বোঝাই করে এবং সড়ক পথে ট্রাক-পিকআপে করে হাজার হাজার মণ ইলিশ চাঁদপুর ঘাটে আনা হয়। আর ইলিশের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহলে মুখরিত এই মাছঘাট। মাছের আমদানি বেশি হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা চাঁদপুরে আসে কম দামে ইলিশ কেনার জন্য। কিন্তু ইলিশের দাম শুনে আশাহত হতে হয় ক্রেতাদের।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন বড়স্টেশন মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর আমদানি হয়েছে ইলিশ মাছের। বিভিন্ন সাইজের ইলিশের আমদানি থাকলেও মাঝারি সাইজের ইলিশই ছিল লক্ষণীয়।
মাছ ঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের নিঝুম দ্বীপের জামাল সেরাংয়ের মাছ তুলতে ছিলেন লেবাররা। জামাল সেরাং জানান তিনি ৮ কাউন মাছ পেয়েছে। যার পরিমাণ হবে দেড়শ মন। তিনি জানান, মাছের দাম বাজার ভালোনা। গ্রেট ২২ হাজার টাকা। নন গ্রেট ১৬ হাজার টাকা করে বিক্রয় করছি। গ্রেট বলতে বুঝায় ৮’শ গ্রাম থেকে উপরে। আর নন গ্রেট বলতে বুঝায় ৮’শ গ্রামের থেকে নিচের দিকের মাছকে।
মাছঘাটে কিছু সময় অপেক্ষো করে দেখা যায়, আড়তদার খন্দকার আবদুল মালেন, মিজানুর রহমান কালু ভূইয়া, বাবুল হাজী, ছোট রব চোকদার, গফুর জমাদারের আড়তসহ প্রায় প্রতিটি আড়তেই প্রচুর ইলিশ উঠেছে। এসব ইলিশ ব্যবসায়ীরা কিনে নেওয়ার পর প্যাকেটজাত করে পরিবহন করছে রাজধানী ঢাকাসহ পাবনা, ইশ্বরদী, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও দেশের বিভিন্ন জেলায়।
চাঁদপুরের সবচেয়ে ইলিশ মাছে ব্যবসায়ী খন্দকার ফিশারিজের মালিক মালেক খন্দকার জানান, চাঁদপুর ঘাটে আগের মতো তেমন মাছ আসেনা। আগে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫’শ মান ইলিশ ঘাটে উঠতো। এখ তা কমে অর্ধেকে নেমে আসছে। কিন্তু চাহিদাতো বাড়ছে। তাই মাছের দাম একটু বেশী। মঙ্গলবার ৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ১৮ থেকে ২০ হাজার, ৭শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ইলিশের মণ ২৮ থেকে ৩০ হাজার, এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ ৩৬ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় আহরিত ইলিশের মূল্য মণপ্রতি ৫-৭ হাজার টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়।
চাঁদপুরে মাছ ঘাটে মাছ কিনতে আসা কচুয়ার জিসান আহমেদ বলেন, ইলিশের আমদানি বেড়েছে জেনে মাছ কিনতে আসলাম। এসে বুঝতে পারলাম আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণে চাঁদপুরের ইলিশ বাজার। শখ করে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ইলিশ কেনার জন্য ঘাটে আসলেও উচ্চমূল্যে ইলিশ কেনা ছাড়া উপায় নেই। প্রশাসনের ইলিশ বাজার মনিটরিং না থাকায় ভরা মৌসুমেও দাম কমছে না ইলিশের। তাই সাধারণ মানুষের সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইলিশ ব্যবসায়ী বলেন, আসলে যে পরিমাণে ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে তাতে দাম আরো কমার কথা। কিন্তু দেশে আহরিত ইলিশের একটা অংশ অবৈধভাবে ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাই ইলিশের দাম ভরা মৌসুমেও কিছুটা বাড়তি রয়েছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, যেই পরিমাণে মাছের চাহিদা রয়েছে সেই পরিমাণে মাছ নদীতে না পাওয়ায় দাম কিছুটা বাড়তি। তারপরেও ইলিশের দাম গত মাসের তুলনায় কমেছে। এখন গড়ে প্রতিদিন চাঁদপুর বড়স্টেশন পাইকারি মাছঘাটে সাগর মোহনা ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মণ ইলিশের আমদানি হচ্ছে বলে জানান তিনি। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি জানান, নদীর নাব্যতা সংকট ও নদীতে চর পড়ার কারণে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ ধরা পড়ছেনা।
তিনি জানান, চাঁদপুরের নদীতে ইলিশ ধরা না পড়লেও দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ আমদানি হচ্ছে। দামও ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। ইলিশ পাচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, অবৈধভাবে বিদেশে ইলিশ পাচার করা হয়নি কিনা তা আমি নিশ্চিত নই। যদি কোনো ব্যবসায়ী এই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত থাকে তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আইনের আওতায় আনবে। এ দিকে আগামী ৯ অক্টোবর থেকে সারাদেশে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে।
Leave a Reply